Header Ads

Love Story

ভালোবাসার গল্প

পাশের সিটে একটা মেয়ে বসে আছে। কিন্তু ওর চেয়ে ওর খাতার প্রতি আমার আগ্রহ বেশি। "তানিয়া" নামের একটা মেয়ের নামসহ ফোন নাম্বার লেখা আছে। দেখা মাত্রই কেন জানি নামটার প্রতি অদ্ভুত আকর্ষণে নাম্বার টা সাথে সাথেই মুখস্ত করে ফেললাম।
তানিয়ার নামের সাথে এভাবেই আমার পরিচয়টা ছিল সম্পূর্ণ কাকতালীয়। তখন সবেমাত্র ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হয়ে কলেজের হোস্টেলে উঠেছি। একদিন বাসে করে হোস্টেলে ফেরার সময় পাশের সিটে একটা মেয়ে বসেছিল। সে ওই খাতা ওয়ালা মেয়েটা। সারা টা রাস্তা দুজনেই চুপচাপ।
.
হোস্টেলে ফিরে দুইদিন পরেও নাম্বার টা আমার মন থেকে সরেনি। তার উপর ক্লাসমেট রা অধিকাংশই প্রেম করত,গার্লফ্রেন্ড ছিল। আমারও ভীষণ ইচ্ছা করত কাউকে নিয়ে রঙিন স্বপ্ন দেখতে। সেটা বয়সের দোষ নাকি সঙ্গদোষ,তা আজও জানিনা।
একদিন রাত্রে সাহস করেই ওই নাম্বারে কল দিলাম। রিং হচ্ছে, কিন্তু কেউ রিসিভ করেনা। কলটা কেটে গেলো। আবার কল দিলাম। রিসিভ করলো একটা মেয়ে,নাম জানালো টিনা।
কেন জানি এই গলার স্বরে কোনো ইন্টারেস্ট পেলাম না। তারপরেও লাইফে ফার্স্ট কোনো অপরিচিতা মেয়ের সাথে কথা বলছি,এতটুকুই মাত্র নতুন অনুভুতি।
টুকটাক আলাপ প্রায়ই চলে আমাদের। এক সময় এসে ভাল বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো আমাদের। টিনা আমার সিনিয়র,ওর প্রেমিকও ছিল। তার গল্প ওর মুখেই শুনেছি।
একদিন সন্ধ্যারাতে টিনাকে যখন কল দিলাম, পাশে কোনো একটা মেয়ের সাথে কথা বলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছিল। এক সময় জিজ্ঞাসা করে ফেললাম,
কে আছেন পাশে?
.
টিনা জানালো ওর মামাত বোন ইতি।আমাদের সেইম ব্যাচ। টিনা আমার কাছে জিজ্ঞাসা না করেই ইতির কাছে ফোন দিয়ে দিলো আলাপ করানোর জন্য।
উফফ!সেদিন একটা ছেলে হয়েও যে কত খানি লজ্জা পেয়েছিলাম তা স্বয়ং আল্লাহ জানেন।ততদিনে আমি তানিয়াকে ভুলে গেছি।
ইতির সাথে দু/একটা কথাতেই আমি মাতাল হয়ে যাচ্ছি। কোনো মেয়ের গলার স্বর এত সুন্দর কিভাবে হয়!
কেন জানি আমার সমস্ত জুড়ে একমাত্র ইতি রাজত্ব করতে শুরু করল। আস্তে আস্তে ইতির সাথে কথা বাড়ছে,আর বাড়ছে আরো গভীর আকাক্ষা। 
অনেক চিন্তা ভাবনা করেই টিনাকে একদিন জানিয়ে দিলাম
"
ইতি কে আমার ভাল লাগে। সম্ভবত আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি। ওকে কি আমি প্রস্তাব দিতে পারি? কি না করে দিতে পারে?"
টিনা একটাও উত্তর করছে না।... আমার ভয় করতে লাগলোকি জানি উত্তর আসে!
এরপর টিনা জানালো...
picture
আমরা সরাসরি দেখা করি এসো। সামনের দিন ক্লাসে এলে তোমাকে জানিয়ে দেবো।
এরপর ইতির ফোন,
"
শোনো,দেখা করবো,কিন্তু আমাকে তোমায় চিনে নেওয়া লাগবে।"
আজ ক্লাসে যাচ্ছি। ক্লাসে আসলে না,ওদের সাথে দেখা করাটাই আমার উদ্দেশ্য।
.
কলেজের এককোনে দাঁড়িয়ে আছি।প্রায় চার পাচ টা মেয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। একদম আমার সামনে।
আমি সত্যিই ওর ফ্রেন্ডদের মাঝে ওকে চিনে নিলাম।কিভাবে পেরেছি তার উত্তর আমার কাছেও নেই।
মাঝের মেয়েটাকে দেখিয়ে বললাম, তুমিই ইতি।
ওর মুখে আমার সত্যতা দেখে যে চাপা হাসি দেখেছিলাম, তা আর সমস্ত কিছুর উপরে।
আশ্চর্য রকম সত্য, ইতিও নাকি আমাকে পছন্দ করে। টিনাও চেয়েছিল ইতির সাথে আমার সম্পর্ক হোক। ধীরে ধীরে আমি আর ইতি সম্পর্কে জড়িয়ে গেলাম। একদিন ইতির কাছে জানতে পারলাম ইতির সার্টিফিকেট নাম নাকি তানিয়া। আর নাম্বার টাও ওরই।
সম্ভবত পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য আমার সাথেই ঘটে গেলো।
ইতিই সেই তানিয়া!
আর দশটা রিলেশনের মতো ভালোই চলছে আমাদের সম্পর্ক। সুযোগ পেলেই কল দেওয়া,দেখা করা,ঘুরতে যাওয়া এর চেয়ে সুন্দর সময় আর সুযোগ আমি এতকালেও পেয়েছি কিনা মনে পড়ে না।
.
কিন্তু সম্ভবত সুন্দর সময় দ্রুতই শেষ হয়ে যায়।
ইন্টার পাশ করে দুজনে আলাদা কলেজে ভর্তি হলাম।
এরপর প্রায়ই ইতিকে রাত ১২ টা/১টা পর্যন্ত ওয়েটিং পাই। জিজ্ঞাসা করলেই নানান অজুহাতে সে এড়িয়ে যায়।কষ্ট পাচ্ছি ভীষণ, কিন্তু কাউকে টের পেতে দিইনা।
একদিন ইতি নিজেই জানালো সম্পর্ক কন্টিনিউ করতে পারবে না আর।
কান্না আটকাতে পারছি না,কিন্তু ইতি ছেড়ে চলে গেলো।ফোন অফ, কোনোভাবেই সে আর যোগাযোগ রাখতে চায় না।
.
পড়াশোনা সেই আগেই ছেড়ে দিয়েছি প্রায়।অনার্স ফার্স্ট ইয়ারেও এক্সাম দিলাম না। মা,বাবা সবাই কষ্ট পেত আমার জন্য। এক সময় ওদের মুখের দিকে চেয়েই আবার স্টাডি শুরু করলাম।এভাবে চলল প্রায় তিন বছর।আমাদের ল্যাব ক্লাস করাতো এপ্রোন পরে।
সেই এপ্রোন পরেই আমার এক ফ্রেন্ড ওর আর আমার একটা ছবি ফেসবুকে আপ্লোড করে আমাকে ট্যাগ দিলো।
এর প্রায় দুই দিন পর একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো। 
রিসিভ করে ভয়েস শুনেই টের পেলাম ওটা ইতি।
আমি অনেক খানি শক খেলাম।
কিছুদিন নরমালি কথা বলল সে।তারপর একদিন জিজ্ঞাসা করল,
"
তুমি ডাক্তারি পড়ছ? জানতাম না তো।"

~
কই? কে বলেছে?
~মিলনের আইডিতে তোমার এপ্রোন পরা পিক দেখলাম।
আমার মনে ধারনা জন্মালো ইতি নিশ্চয় একারণেই আমার সাথে যোগাযোগ করছে।
কত্ত পাগল আমি!
ওর এই স্বার্থপর চিন্তাকে প্রশ্রয় দিয়ে আমিও মিথ্যে বললাম
"
হ্যা।"
এরপর কি সুন্দরভাবে আমাদের রিলেশন চলতে লাগলো!
এভাবে প্রায় তিনমাস পর আমার বিবেকে যেন কিসে অনবরত দংশন করতে লাগল।আমি ইতিকে সত্য টা জানিয়ে দিলাম,
"
আমি মেডিকেলে পড়ি না,
আমি জাতীয়তে রসায়নে অনার্স পড়ছি। "
এরপর ইতি আর আমার রইলো না।আমার মিথ্যের সাজা স্বরুপ সে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।
আর অভিশাপ দিয়ে গেলো
"
আমি মরেও শান্তি পাবো না।"
.
আচ্ছা ইতি, আমি শান্তি পেলাম না,তাতে আমার দু: নেই, কিন্তু তুমি শান্তি পেয়েছ তো?
আমি প্রতারণা করেছি স্বীকার করি,
কিন্তু তোমার স্বার্থপরতা টুকু কি চোখে পড়ে না?
তোমার শত অভিনয়ের ভিড়েও তুমি একমাত্র তুমিই প্রতিবার আমার মস্তিস্কে ফিরে আসো।
আমি শত ভুলের মাঝেও তোমাকে ভালবাসতে রাজি।
তুমি মানে তুমিই।
তোমার ভুল আমি পুড়িয়ে দিয়েছি আমার ভুলের আগুনে।
ভালবাসি তোমায় আজও....

(
সত্য ঘটনা থেকে। নামগুলো কাল্পনিক মাত্র)

No comments

Powered by Blogger.